রোজায় স্ত্রী সহবাসের সুন্নতি নিয়ম এসোজানি

রোজায় স্ত্রী সহবাস করা যাবে কি? গেলে কখন করা যাবে, কখন যাবে না। কোরআন হাদিসের আলোকে এর কোন সুন্নতি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কি না। আজকের আলোচনায় আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। তাই আপনাকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করছি।

নফল রোজা রেখে সহবাস করা যাবে কি সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা রমজান মাসে সহবাস করা কি জায়েজ দিনের বেলা সহবাস করার উপকারিতা রমজানে স্বামী স্ত্রীর মেলামেশা স্বামী স্ত্রী কিভাবে করে সেটা দেখান দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি সহবাসের আনন্দ পাওয়ার উপায় স্ত্রী সহবাসের পরের দোয়া সহবাসের আগে ও পরে করণীয় স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি অধিক সময় সহবাসের দোয়া সহবাসের আনন্দ পাওয়ার উপায় স্বামী স্ত্রী কিভাবে করে সেটা দেখান সহবাসের আগে ও পরে করণীয় সহবাসের সময় স্ত্রীর করণীয় সহবাসের নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম স্ত্রী সহবাসের স্ত্রী সহবাসের দোয়া স্ত্রী সহবাসের নিয়ম স্ত্রী সহবাসে রাজি না হলে স্ত্রী সহবাসের দোয়া আরবি স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম স্ত্রী  সহবাসের সময় স্ত্রী সহবাসের ফজিলত esojani.com esojani এসোজানি


রোযা

পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ সূরা সূরা আল বাকারাহ এর ১৮৩ আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্ব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ওহে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজার বিধান(ফরজ) দেয়া হয়েছে, যেমন বিধান দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের উপর, যেন তোমরা তাকওয়াবান এবং পরহেজগার  অর্থাৎ আল্লাহভীরু, সচ্চরিত্র, ধর্মনিষ্ঠ, পাপমুক্ত, নীতিবান হতে পার। আল কোরআন।

মূলত এই আয়াতের মাধ্যমেই রোজা ফরজ করা হয়েছে। একই সূরার ১৮৫ নং আয়াতে রমজানের কথা উল্লেখ থাকায় আমরা রমজানে পুরো এক মাস ফরজ রোযা আদায় করি। অপরদিকে পবিত্র হাদিস শরিফে এসেছে-

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণনায় এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সো:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ আক্বিদা ও পর্যালোচনা সহকারে রমজান মাসের রোযা পালন করবে, তার আগের এবং পরের যাবতীয় গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী হাদিস নং ৩৮ এবং সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৭৬০)

এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখা উচিত। যেকোন নফল বা সুন্নত আমল নিয়ত করে শুরু করার পর তা পরিপূর্ণ আদায় করা আপনার উপর ফরজ হয়ে যায়। রোযাও এর ব্যাতিক্রম নয়।

রোযার হারাম বা রোযা ভঙ্গের কারণ 

প্রত্যেক এবাদতের মতো রোযারও কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। কিছু গর্হিত কাজ রয়েছে যেগুলো করলে রোযা মাকরুহ হয়ে যায়। আবার এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো সংঘটিত হলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন:-

১। সহবাস করা

রোযা অবস্থায় নারী পুরুষের দৈহিক মিলন হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে বীর্যপাত হোক বা না হোক। অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করা মাত্রই তাদের জন্য গোসল ফরজ হয়ে যাবে এবং রোযা ভেঙ্গে যাবে। চায় সে স্বামী স্ত্রী হোক বা না হোক। তবে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরা বা চুম্বন করা যেতে পারে যদি ঐ ধরনের কোন আশংকা না থাকে।

২। হস্তমৈথুন করা

নারী পুরুষের যে কেউ উত্তেজনা বসত হাত দিয়ে যৌনাঙ্গ নাড়াচাড়া করলে যদি বীর্যপাত হয় তাহলে গোসল ফরজ এবং রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে গোসল ফরজ হয়না এমন অবস্থায় থাকলে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু রোযা অবস্থায় এধরণের কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকাই শ্রেয়। আর হস্তমৈথুনকে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন- তোমরা নিজেদেরকে ধংসের দিকে ঠেলে দিও না। আল কোরআন।

৩। পানাহার করা

ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু খাওয়া বা পান করা। তবে অনিচ্ছাকৃত হলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত পানহারের পর রোযা নষ্ট হয়েছে ভেবে পুনরায় পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

৪। যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

সরাসরি পানাহার নয় তবে পানাহারের মতই এমন সব কাজ করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন :- ধুমপান, কোন মেডিসিন নেওয়া, কোন কিছুর টেস্ট নেওয়া ইত্যাদি। 

৫। হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো অথবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা

হিজামা ইসলামে বৈধ হলেও রোযা অবস্থায় তা জায়েজ নেই। তাই রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগালে বা অন্যকোন উপায়ে রক্ত বের করলে বা হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।  তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই গড়িয়ে রক্ত পড়া চাই।

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে বা মুখ ভরে বমি হলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। 

৭। নারীদের হায়েয ও নিফাস হওয়া

মহিলাদের হায়েয বা মাসিক হলে এবং সন্তান জন্মদানের পর ৪০ দিন অর্থাৎ নিফাস অবস্থায় রোযা থাকা নিষিদ্ধ। তাই এতদ্বিষয় সংঘটিত হলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়।


যাইহোক আমাদেত আজকের বিষয় সহবাস। এ ব্যাপারে রাসুলে পাক (সা:) এর পবিত্র জবানীতে এসেছে-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “একদা এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে এসে আরজ৷ গুজার করল: ইয়া আল্লাহর রাসুল (সা:), আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। দয়াল নবী রাসুলে করীম (সাঃ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল: আমি রমযানে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সংগম করে ফেলেছি। রাসুল সাঃ  বললেন: তুমি কি একটি ক্রীতদাস মুক্ত করতে পারবে? সে উত্তর দিল: না। রাসুল সাঃ বললেন: তাহলে কাফফারা স্বরূপ একটানা দুই মাস(৬০দিন) রোযা রাখতে পারবে? সে বলল: না। অত:পর রাসুল সাঃ পুণরায় জিজ্ঞেস করলেন: তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে উত্তর দিল: না.......। হাদিসটি সহিহ বুখারী ১৯৩৬ নং হাদিসে এবং  সহিহ মুসলিমে ১১১১ নং এ এসেছে।

আবার অন্যদিকে 

হাদিসে কুদসীতে রোযাদার সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্ব্বুল আলামিন বলেন- “সে(যে রোযাদার) আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে”। আল হাদিস।

সুতরাং যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলায় অর্থাৎ রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাহ করবে তার জন্য উপরের হাদিসে বর্ণিত ৩টির যেকোনো একটি করতে হবে। তার মধ্যে দাস প্রথা বর্তমানে প্রচলিত নেই। একটানা ৬০ দিন রোযা রাখা অত্যন্ত দুরুহ। আবার ৬০ জন মিসকিনক খুঁজে বের করা এবং খাবার খাওয়ানো মোটেই সহজ কাজ নয়। 

অন্যদিকে রোযায় দিনের বেলায় বা রোযা থাকা অবস্থায় যে হস্তমৈথুন করবে তার উপর ফরয হচ্ছে— কৃতকর্মের জন্য তওবা করা এবং বাকি দিন উপবাস থাকা বা রোযার মত থাকা। পরবর্তীতে সে রোযাটির কাযা পালন করা অর্থাৎ একটি রোজা রাখা। আর যদি এমন হয় যে,  হস্তমৈথুন শুরু করেছে মাত্র কিন্তু বীর্যপাত হয়নি বা  বীর্যপাতের আগে সে তা থেকে ফিরে এসেছে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং তার রোযা সহিহ হবে। যেহেতু বীর্যপাত হয়নি তাই রোযাটি কাযা আদায় করতে হবে না।

তবে মনে রাখতে হবে রোযাদারের উচিত হচ্ছে যে,— সকল প্রকার যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা এবং সকল শয়তানি চিন্তা থেকে থেকে নিজের মনকে হেফাযত করা। আর যদি, মজি বা কামরস বের হয় তবে অধিকাংশ আলেমের মত হল এটি রোযা ভঙ্গকারী নয়।


রোযায় স্ত্রী সহবাস করার নিয়ম

পবিত্র কালামে ইরশাদ হয়েছে-

সিয়ামের তথা রোযার রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পোশাক স্বরুপ। আল্লাহ অবগত যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খেয়ানত করছিলে, তারপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা ঠিক করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে (রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা(সুবহে সাদিক) স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত(সারাদিন) সিয়াম পূর্ণ করো। তবে তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে মিলিত(যৌন) হয়ো না। আর এসবেই হচ্ছে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। (সূরা বাকারাহ-১৮৭)

এই আয়াতে ক্বারিমা থেকে স্পষ্ট যে, দিনে রোযা থাকলেও রাতে স্ত্রী সংগম করতে কোন বাধা নেই। রমজানের রাতে সহবাস করার আলাদা কোন বিধান নেই। সচরাসর যেভাবে সুন্নত মেনে সহবাস করেন ঐভাবেই করবেন।

আরও জানতে পড়ুন-

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ স্ত্রী সহবাসের সুন্নত ত্বরিকা


রোযায় স্ত্রী সহবাসের সাবধানতা

যথারীতি যেসব ধর্মীয় ও সামাজিক সাবধানতা অবলম্বন করেন তাই মেনে চলবেন। তবে রমজানে যেহেতু সবকিছুর সময়সীমা নির্ধারিত থাকে তাই তখন এক্সট্রা এলার্ট থাকুন। আপনার রোযা সেহেরি ইফতার তারাবীহ তাহাজ্জুদ মাওলার দরবারে কবুলিয়্যাতের যোগ্যতা অর্জন করুক। আল্লাহ রাব্ব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে জানার এবং বুঝার তওফিক দান করুন। আমিন।।।

নফল রোজা রেখে সহবাস করা যাবে কি সেহরির পর সহবাস করা যাবে কিনা রমজান মাসে সহবাস করা কি জায়েজ দিনের বেলা সহবাস করার উপকারিতা রমজানে স্বামী স্ত্রীর মেলামেশা স্বামী স্ত্রী কিভাবে করে সেটা দেখান দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি সহবাসের আনন্দ পাওয়ার উপায় স্ত্রী সহবাসের পরের দোয়া সহবাসের আগে ও পরে করণীয় স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি অধিক সময় সহবাসের দোয়া সহবাসের আনন্দ পাওয়ার উপায় স্বামী স্ত্রী কিভাবে করে সেটা দেখান সহবাসের আগে ও পরে করণীয় সহবাসের সময় স্ত্রীর করণীয় সহবাসের নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম স্ত্রী সহবাসের স্ত্রী সহবাসের দোয়া স্ত্রী সহবাসের নিয়ম স্ত্রী সহবাসে রাজি না হলে স্ত্রী সহবাসের দোয়া আরবি স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম স্ত্রী  সহবাসের সময় স্ত্রী সহবাসের ফজিলত

AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন