২/ বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
(১) বর এবং কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর ও কনে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, "বিধবাকে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জায়) থাকাটাই তার সম্মতি। " (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)
(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবকদের পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। ’ (সুরা নুর, ২৪:৩২)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০২১)
(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। ’ (সহিহ জামে, হাদিস নং : ৭৫৫৮)
সাক্ষী হতে হবে এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পান। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)
বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১০৭২)
৩/ বিয়ের অভিভাবক
ফিকাহবিদগণ অভিভাবকদের ধারা নির্ণয় করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।
বিয়ের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্তঃ
১. সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত হতে হবে।
৪.অভিভাবককে মুসলিম হতে হবে। সুতরাং কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. আদেল অথবা ন্যায়বান হতে হবে।। অর্থাৎ ফাসেক হওয়া চলবে না। যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার ভালো-মন্দ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকতে হবে।
৬.অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। দলীল হচ্ছে মহানবী (সাঃ) বলেছেন- “এক মহিলা আরেক মহিলাকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা মহিলা নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়।”[ইবনে মাজাহ (১৭৮২) ও সহীহ জামে (৭২৯৮)।
৭. বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকতে হতে হবে। এটি হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু) ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার মত যোগ্যতা।
৪/ বিবাহের যত সুন্নাত
১. সহীহ বিবাহ অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হবে এবং তাতে কোন যৌতুকের শর্ত বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। (হাদীস নং- ৩৬১২, তাবরানী আউসাত)
২. সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর খোঁজ করে বিবাহের পয়গাম পাঠান । কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও বর্জনীয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাদীস নং- ৫০৯০)
৩. শাওয়াল মাসে এবং জুমু‘আর দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা সুন্নত। তবে যেকোন মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৩/ বাইহাকী, হাদীস নং- ১৪৬৯৯)
৪. বিবাহের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিয়ের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মাঝে খেজুর বণ্টন করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫১৪৭)
৫. সামর্থ্যের মধ্যে মহর ধার্য করা।(আবু দাউদ: হাদীস নং- ২১০৬)
৬. বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের কিছু চুল হাতে নিয়ে এই দু‘আ পড়াঃ
اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْألُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ . وأعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ.
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা জাবালতাহা আলাইহি। ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালবাহা আলাইহে (আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৬০)।
 |
বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ | সবার জানা জরুরি |
৭. স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমেই অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিচের দু‘আ পড়ে নেওয়া
بِسْمِ اللّهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطانَ مَا رَزَقْتَنَا.
"বিসমিল্লাহ, আলহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪)
মনে রাখবেন, উপরের দু‘আ না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। যারফলে সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং সন্তান নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা-মাতাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
৮."বাসর রাতের পর দু’হাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গরীব-মিসকিনদের তাওফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৭)"
মনে রাখতে হবে-
(ক) কোন পক্ষ অলংকারের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক দাবি হারাম। (আহসানুল ফাতাওয়া, ৫ : ১৩)
(খ) কনের ইযন(অনুমতি)-এর জন্য সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের কোন লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরাম বিবাহের উকিল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২১)
(গ) চুক্তি করে বরযাত্রীর নামে বরের সাথে অনেক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর চাপ সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২০৭২২/ বুখারী হাদীস নং- ২৬৯৭)
(ঘ) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক নয়। বরং সাধ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত । যে ওলীমায় শুধু ধনী লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওলীমাকে রাসুল(সাঃ) নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওলীমার আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত।(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৫৪)
(ঙ) ওলীমার মজলিসে হাদিয়া/উপহার লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ দিতে চাইলে নিজের সুযোগ মত পাঠিয়ে দিবে, প্রচার/প্রকাশ করবে না, গোপনে দিবে, এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।
উপকারী কথা
উত্তরমুছুনThanks
মুছুনMaa sha Allah
উত্তরমুছুনThanks
মুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনAlhamdulillah onek kichu jante parlam., zeta sobar jana dorkar.
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ
মুছুন