মরনোত্তর অঙ্গদান কি
মরনোত্তর অঙ্গদান হচ্ছে এমন একটা প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন দাতব্য সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় যে তার মৃত্যুর পর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো তিনি ঐ দাতব্য সংস্থায় দান করবেন বলে উইল করে যান। উইলকারীর মৃত্যুর পর ঐ সংস্থা নির্দিষ্ট প্রটোকল মেনে পোস্টমর্টেম করে ঐসব অঙ্গ সংগ্রহ করে জীবিত ব্যাক্তিদের অঙ্গে প্রতিস্থাপন করে থাকেন।
মরনোত্তর অঙ্গদান ইসলাম কি বলে| করণীয় ও সাবধানতা |
মরনোত্তর অঙ্গদান কেন করা হয়
মরনোত্তর অঙ্গদানের প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মৃত ব্যাক্তির বডির পার্ট নিয়ে আরেকজন জীবিত অসুস্থ ব্যাক্তির সুস্থতা ফিরিয়ে আনা। সারা বিশ্বেই এর প্রচলন রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশি প্রথম আলোর কিশোর সাংবাদিক ও কিশোর আলোর অন্যতম সংঘটক সারাহ ইসলামের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সূচনা হয়েছে। তার দান করা কিডনি ও কর্ণিয়া চার জনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে চারজনই ভাল আছেন।
কোন কোন অঙ্গ দান করা যায়
চাইলে সম্পূর্ণ মানবদেহই দান করা যায়। বিশেষকরে অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, লিভার, প্যাংক্রিয়াস, অস্থি, অস্থিমজ্জাই মূলত দান করা হয়। এর বাইরেও ক্ষেত্র বিশেষে চোখ বা চোখের কর্নিয়া, বিশেষ কোন হাড়, নির্দিষ্ট অংশের ত্বক, হার্ট-এর ভালভ, ব্লাড ভেসেল, নার্ভ এমনকি টেন্ডনও দান করা যায়।
মৃত্যুর কতক্ষণ পর অঙ্গদান করতে হয়
মরনোত্তর অঙ্গদানের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। যেমন: একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার হার্ট প্রতিস্থাপন করতে হয় সর্বোচ্চ চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে। ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যায় ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার ভিতর, লিভারের ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা। অন্যদিকে প্যাংক্রিয়াস ভাল থাকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা এবং কিডনি ২৪ থেকে ৪৬ ঘণ্টা। এইরকম সময়সীমা অস্তিমজ্জা, ত্বক এবং হাড়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নির্দিষ্ট সময়ের পরে ঐ অঙ্গগুলো তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ব্যাবহার অযোগ্য হয়ে যায়। আবার চোখ প্রতিস্থাপন করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
অঙ্গদানের পদ্ধতি
অঙ্গদান করার জন্য যে চুক্তিনামা করা হয় তার বিভিন্ন রকম রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু ম্যানুয়ালি এপ্লিকেশন গ্রহণ করে থাকলেও বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনেও চুক্তিনামা সম্পন্ন করার ব্যাবস্থা রয়েছে। ম্যানুয়াল প্রসেসের মধ্যে-
বাংলাদেশের যেকোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের ( যারা মরনোত্তর অঙ্গদানে চুক্তিবদ্ধ হয়) অধ্যক্ষ বা পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হয়। যেখানে স্ট্যাম্প কাগজে হলফনামা, দুই কপি সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিয়ে আবেদন করতে হবে। অবশ্যই সেখানে পরিবারের দুইজন সদস্যের সাক্ষী হিসাবে সম্মতি থাকতে হবে। অন্যদিকে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করতে হলে প্রথমেই আপনাকে নিজের চালু মোবাইল নম্বর অথবা ভ্যারিফাইড ইমেল আইডি নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং আপনি কোন কোন অঙ্গ দান করতে চান সেটিও আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে। তারপর আপনার বিস্তারিত ঠিকানা অর্থাৎ নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি এবং রক্তের গ্রুপ দিয়ে চুক্তি ফর্ম ফিলআপ করতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, আপনার মৃত্যুর পর অঙ্গদানের সমস্ত ফরমালিটিজ ও হস্তান্তর করার দায়িত্ব আপনার পরিবারের। তাই পরিবারের সদস্যদের আপনার ইচ্ছের কথা ও অঙ্গদানের রেজিস্ট্রেশনের কথা অবশ্যই জানিয়ে রাখবেন।
আইনের দৃষ্টিতে মরনোত্তর অঙ্গদান
মরনোত্তর অঙ্গদান যেহেতু মানবকল্যাণে করা হয় এবং যিনি করেন তিনি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় করে থাকেন তাই দেশের প্রচলিত আইনে এর কোন বিধিনিষেধ নেই।
তবে বাংলাদেশে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯' নামে একটি আইন পাস হয়। এই আইনটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে তাঁর নিকট আত্মীয়রা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। কিন্তু মৃত ব্যাক্তির দেহ থেকে অঙ্গদান নিয়ে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন আইন করা হয় নাই। ১৯৮২ সালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হলেও তা কেবল জীবিত ব্যাক্তিদের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
মরনোত্তর অঙ্গদানের ইসলামি বিধান
ইসলাম মরনোত্তর অঙ্গদান কতটা সমর্থন করে এ নিয়ে খানিকটা বিতর্কের রেশ রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যাক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন অঙ্গ বা রক্ত দান করাকে ইসলাম অনুসমর্থন করে এবং সওয়াবের কাজ বলেই বিবেচিত হয়। কিন্ত একজন মুসলমান মারা যাওয়ার পর ধর্মমতে তার গোসল জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন করতে হয়। এসব ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ অনুভূতি ও বিশ্বাস। তাই বিশ্বাসের জায়গা থেকে অনেকেই এটাকে মেনে নিতে নারাজ।
মরনোত্তর অঙ্গদান কি জায়েজ
এ প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডস'এর লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি গবেষক ও চিন্তাবিদ মোহাম্মদ ঘালি এর মতে, ‘‘ তাঁরা মনে করেন মানুষের দেহকে মৃত্যুর পরেও সংরক্ষণ করা উচিত৷ পবিত্র কোরান ও সুন্নাহর আলোকেপাওয়া যাবে এই ধরনের নীতিকথা৷ যেকারণে মৃত্যুর পর কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বের করা জায়েজ হবে না৷ কারণ মৃত্যুর পর, মৃত ব্যাক্তির পক্ষে বাধা দেয়া আর সম্ভব নয়৷
ইসলাম ধর্মতত্ত্বের প্রফেসর সাইম ইয়েপ্রেম বলেন- মৃত্যুর পর মৃতদেহ নিয়ে কী করা হবে এ ব্যাপারে ধর্মের কোথাও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়নি৷ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোথাও পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা না থাকলে জনকল্যাণে তা অনুমোদনযোগ্য হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কোনভাবেই বাণিজ্যিক না হয়ে যায়।
আবার বিভিন্ন ইসলাম অধ্যুষিত দেশের পাশাপাশি মক্কা মদিনার দেশও ৭০-৮০ এর দশকেই ফতোয়ার মাধ্যমে মরনোত্তর অঙ্গদানকে অনুমোদন দিয়েছে।
মরনোত্তর অঙ্গদানের সতর্কতা
যেহেতু এটি ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বিতর্কিত, তাই করেন বা না করেন যাই করেন না কেন, আগে ভাল করে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। হূট করে আবেগে এমন গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। আবার মৃত্যর পর আপনার দেহের তথা লাশের দেখভাল করবেন আপনার পরিবার পরিজন তাই তাদের সাথে আগেই আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করুন।
ধন্যবাদ।।।
মরণোত্তর চক্ষুদান ইসলাম কি বলে মরণোত্তর দেহ দান কি জায়েজ মরণোত্তর দেহদান প্রতিবেদন রচনা অঙ্গদান প্রতিবেদন মরণোত্তর দেহ দান করার নিয়ম অঙ্গ দান করা কি জায়েজ মরণোত্তর কিডনি দান মরণোত্তর দেহদান in english মরনোত্তর চক্ষু দান মরণোত্তর অর্থ কি কিডনি দান কি জায়েজ মৃত্যুঞ্জয় সংগঠন মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক মরণোত্তর ইংলিশ মরনোত্তর অঙ্গদান কি মরণোত্তর অঙ্গদান ইসলাম কি বলে মরণোত্তর অঙ্গদান ইসলাম মরণোত্তর অঙ্গদান