অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ১০০% আয় করার উপায় এবং সতর্কতা

কিছু কমিশনের বিনিময়ে কোন কোম্পানির পন্য বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্লগার এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের পছন্দের ইনকাম সোর্স এফিলিয়েট মার্কেটিং। ব্যবসার সেল বাড়াতে এটি অনেক সাহায্য করে। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে চার ধরনের ব্যক্তি থাকে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ১০০% আয় করার উপায় এবং  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সতর্কতা, কিভাবে শুরু করবেন, সুবিধা অসুবিধা, যে ৩টি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে-


১. এফিলিয়েট: যেসব ব্যক্তি কমিশনের বিনিময়ে পন্য বিক্রি করতে সাহায্য করে তাদের এফিলিয়েট বলে।

২. নেটওয়ার্ক: পাবলিশার এবং মার্চেন্টের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হলো নেটওয়ার্ক। বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে।

৩. মার্চেন্ট: পন্য বা সেবার মালিক হলো মার্চেন্ট।

৪. কাস্টমার: যারা পন্য ক্রয় করে তাদের কাস্টমার বলে।


এপিলিয়েট মার্কেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 

১. টাইম

পর্যাপ্ত সময় না দিলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া প্রায়  অসম্ভবপর। কারণ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি মাল্টি বিলিয়ন ইন্ডাস্ট্রি। একদিকে প্রতিযোগিতা অন্যদিকে প্রযুক্তির আপডেট-উভয় মিলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া অতীব প্রয়োজন।

২. টেকনিক

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে অনেক বেশি কৌশলী (strategist) হওয়া ছাড়া উপায় নাই। আপনি যত বেশি কৌশলী হবেন, আপনার বিজনেস প্রোমোট করার জন্য অনেক নিত্যনতুন কৌশল বের করতে পারবেন প্রতিনিয়ত। তাহলে একদিকে আপনার বিসনেস আপ টু ডেট থাকবে, অন্যদিকে আপনার নির্দিষ্ট অডিয়েন্স থেকে পর্যাপ্ত পরিমান রেসপন্স পাবেন।

৩. ইনভেস্ট 

অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমান ‍বিনিয়োগের অভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফলতা আসতে দেরি হয়। আপনি শুধু ফ্রি মেথডে কাজ করে রেজাল্ট আনতে অনেক বেশি সময় ও শ্রম দিতে হবে। কিন্তু পেইড মেথডে কাজ করলে (ফেইসবুক, PPC ইত্যাদি) আউটপুটটা দ্রুত আসা পসিবল।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য কোন কোন বিষয়ে ধারনা থাকতে হয়?

  • কীওয়ার্ড রিসার্চ এবং নিশ্(বিষয়) নির্বাচন। 
  • SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)।
  • ওয়েব সাইট তৈরির খুটিনাটি কাজ।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (বিশেষ করে, ফেইসবুক, ইউটিউব মার্কেটিং)।
  • গুগল এ্যাডওয়ার্ডস্ এবং গুগল এ্যাডসেন্স।
  • ই-মেইল কালেকশন (লিস্ট বিল্ডিং) এবং ইমেইল মার্কেটিং
  • লিংক বিল্ডিং প্রসেস এবং লিংক শেয়ারিং। 
  •  ট্র্যাফিক জেনারেশন এর বিভিন্ন উপায়
  • কন্টেন্ট অপটিমাজেশন ইত্যাদি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রথমে মার্চেন্ট একটি পন্য সেবা মার্কেটে প্রকাশ করে। এরপর মার্চেন্ট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন সেট করে রাখে যা একজন এফিলিয়েট বিক্রি করতে পারলে পাবে। একজন ক্রেতা যদি উক্ত পন্যটি এফিলিয়েটের মাধ্যমে ক্রয় করে তাহলে এফিলিয়েট সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবে। নিচের প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি আরোও পরিষ্কার করা হলো।



অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ১০০% আয় করার উপায় এবং  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সতর্কতা, কিভাবে শুরু করবেন, সুবিধা অসুবিধা, যে ৩টি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে-

কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করে?

যদি আপনি ভালো পরিমানে কমিশন দেন তাহলে অনেকে আপনার পন্যের এফিলিয়েট মার্কেটিং করবে। এক্ষেত্রে আপনি কিছু কমিশন দিয়ে বিনামুল্যে প্রচার করতে পারবেন। আপনার লাভ কম হলেও পন্য বা সেবা প্রচুর মানুষের কাছে পৌঁছাবে। ধরুন আপনার একটি পন্যের মূল্য ১০০০ টাকা এবং বিক্রি করতে পারলে আপনার লাভ হবে ১৫০ টাকা।

এখন আপনি উক্ত পন্যের উপর ৫% কমিশন নির্ধারণ করলেন। অর্থাৎ উক্ত পন্যটি কেও এফিলিয়েট মার্কেটিং করে বিক্রি করতে পারলে ৫০ টাকা পাবে। তাহলে এখনো আপনার ১০০ টাকা লাভ থাকছে। আবার আপনি লাভ পাওয়ার সাথে সাথে কোম্পানির প্রচার বিনমুল্যে পেয়ে যাচ্ছেন। অতএব এফিলিয়েট মার্কেটিং করলে কম লাভ হলেও আপনার পন্য বা কোম্পানির বহুল প্রচার হবে। যার ফলে কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি পাবে।

কিভাবে এফিলিয়েট কমিশন দেওয়া হয়?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে কমিশন দেওয়া হয়। নিচে প্রধান প্রধান কমিশন সিস্টেম গুলো আলোচনা করা হলো।

PPS (Pay Per Sell): বর্তমানে সাধারণত এই পদ্ধতি অনুসরন করে এফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন দেওয়া হয়। PPS এর ক্ষেত্রে একটি পন্য বিক্রি করতে পারলে তারপর কমিশন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিশনের পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে।

PPA (Pay Per Action): এক্ষেত্রে কোনো অডিয়েন্স যদি ফ্রি ট্রায়াল, ইমেইল নিউজলেটার, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি করে তাহলে তার জন্য কমিশন দেওয়া হয়। এটি কিছুটা সহজ হওয়ায় কমিশন কম দেওয়া হয়।

PPC (Pay Per Click): এই সিস্টেমের ক্ষেত্রে প্রতিটা ক্লিকের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক এই সিস্টেম ব্যবহার করে। নতুনদের ক্ষেত্রে এটি অনেক সহজ এবং আয় অনেক ভালো হয়।

কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন?

আপনি যদি একজন ব্লগার, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার অথবা ইউটিউবার হয়ে থাকেন তাহলে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন।
নিম্নের অংশে কয়েকটি ধাপ দেওয়া হলো যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন।

. টপিক নির্বাচন

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে টপিক নির্বাচন অনেক গুরুত্বপুর্ন। কারন আপনি যে টপিক নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করবেন সেই টপিকের উপর এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হবে। অন্যথায় আপনি খুব একটা সফল হতে পারবেন না। যেমন আপনি যদি গ্যাজেটস নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করেন এবং সেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক পন্য সেল করতে যান তাহলে খুব একটা মানুষ কিনবে না। অতএব টপিক নির্বাচন অনেক গুরুত্বপুর্ন।

২. ওয়েবসাইট তৈরী
আপনি যদি ভালো ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তাহলে ওয়েবসাইট প্রয়োজন। তাছাড়া ব্লগিং করতে হলে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি কন্টেন্ট লেখার পাশাপাশি সুন্দর ডিজাইনের এফিলিয়েট বিজ্ঞাপন, পোস্টার, পপ আপ, ব্যান্যার ইত্যাদি তৈরী করতে পারবেন যা আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

৩. এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন
একটি বিশ্বস্ত এবং বেশি কমিশন দেয় এরকম এফিলিয়েট প্রোগ্রাম আপনাকে খুজতে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কন্টেন্টের সাথে মিলে যায় এমন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুজতে হবে। বাংলা কন্টেন্টের জন্য বর্তমানে জনপ্রিয় দুইটি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিচে উল্লেখ করা হলো।

খ. দারাজ এফিলিয়েট প্রোগ্রাম
বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো দারাজ। আপনার টপিক অনুযায়ী দারাজে অনেক পন্য পেয়ে যাবেন। প্রতিটি পন্যের উপর দারাজ সর্বোচ্চ ১২% কমিশন দেয়।

গ. বিডি শপ এফিলিয়েট প্রোগ্রাম
বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো বিডি শপ। এখানেও আপনি অনেক পন্য পেয়ে যাবেন। বিডি শপ প্রতিটি পন্যের উপর ৩-৭% কমিশন দেয় এবং সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকা হলে উত্তোলন করা যায়। এছাড়া তাদের কমিশন মেম্বারশিপের উপর নির্ভর করে।

৪. প্রোডাক্ট নির্বাচন
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবথেকে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো প্রোডাক্ট নির্বাচন। আপনার অডিয়েন্স কোন প্রোডাক্ট বেশি কিনবে তা আপনাকে আন্দাজ করতে হবে। আপনি ব্যবহার করেছেন এমন প্রোডাক্ট নিয়ে যদি পোস্ট করেন তাহলে সবথেকে ভালো হবে। কারণ আপনি সেটি ব্যবহার করেছেন অতএব তার ভালো এবং খারাপ দিক সম্পর্কে ভালো জানবেন। বর্তমানে অনেক কোম্পানি এফিলিয়েট মার্কেটারদের প্রডাক্ট টেস্ট করার জন্য একটি কপি দেয়। তবে এক্ষেত্রে জনপ্রিয় এফিলিয়েট মার্কেটার হতে হবে।

৫. অর্গানিক অডিয়েন্স তৈরী
আপনার যদি ভালো মানের অর্গানিক অডিয়েন্স না থাকে তাহলে কখনোই সেল পাবেন না। কারন অডিয়েন্স আপনাকে বিশ্বস্ত মনে করলে তবেই পন্য কিনবে। তাই অর্গানিক অডিয়েন্স অনেক গুরুত্বপুর্ন। আপনি ইমেইল নিউজলেটার, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি করে অর্গানিক অডিয়েন্স পেতে পারেন।

 অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সতর্কতা

১/ প্রাইভেসির ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে ওনারশিপ হারাতে পারেন।
২/ স্প্যামিং এর ফাঁদে পা দিবেন না।
৩/ বিজনেস পার্টনারের টার্মস এন্ড কন্ডিশন ভালোভাবে না বুঝে ডিল করতে যাবেন না।
৪/ ডিলিং এর আগে খুটিনাটি সব বিষয় জেনে নিন, নয়তো ঠকে যেতে পারেন।
৫/ পেমেন্ট সিস্টেম এবং কন্ডিশন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন ইত্যাদি। 


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধাঃ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি স্মার্ট এবং আধুনিক পেশা। এই পেশার কিছু স্বাতন্ত্রতা রয়েছে যা এটিকে অনলাইনের অন্যান্য কাজ থেকে পৃথক করেছেঃ

  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কোনো বিড করার দরকার পড়ে না।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করার  যথেষ্ট সুযোগ থাকে।
  • একটি ওয়েবসাইট দিয়ে খুব সহজেই প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব হয়।
  • একটিমাত্র অ্যাফিলিয়েট সাইট দিয়ে একাধিক ওয়েতে ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে।
  • আনলিমিটেড ইনকাম করা সম্ভব।
  • ২৪ ঘন্টাই ইনকাম করা সম্ভব।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অসুবিধাঃ

অনেক সুবিধার পাশাপাশি এই পেশার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন,

  • প্রথম দিকে অনেকেই বিনিয়োগ করতে চায় না।
  • সামান্য কাজের জন্য অনেক রিস্ক নিলেও এই ইন্ডাস্ট্রির রিস্কটা অনেকে নিতে চায় না।
  • ইনকামের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়।

উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে পারলে আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে উঠতে পারবেন। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়। তাই প্রচুর ধৈর্য্য এবং ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে।

আমাদের আলোচনা আজ এই পর্যন্তই। আশাকরি আমাদের আজকের এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে।

ধন্যবাদ সবাইকে।



AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

1 মন্তব্যসমূহ

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন