আসসালামু আলাইকুম.
সম্মানিত পাঠক, যদি কোন উচ্চশিক্ষিত ্মা বাবাকে জিজ্ঞেস করা যাদের ২/৩ টা বাচ্চা হয়েছে যে, আপনি বলুন তো ফরজ গোসলের সঠিক ত্বরিকা কোনটি? আমাদের সমাজের কয়জন এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন, তা আপনিই অনুমান করুন। বেশি কষ্ঠ হলে নিজেকেই প্রশ্ন করতে পারেন। সম্মানিত পাঠক, আপনাকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ইসলাম হুকুমের ধর্ম।শুধু ইসলাম কেন? পৃথিবীর কোন ধর্মই যুক্তি তর্ক দিয়ে বিশ্লেষন করা যায় না। ধর্ম সম্পূর্ণরূপে ভক্তি, বিশ্বাস ও হুকুমের বিধান। কি বুঝলেন না তো? দাঁড়ান উদাহরন দিচ্ছি। খেয়াল করুন যে যে কারণে অযু নষ্ঠ হয় তার একটাও কিন্তু অযু করতে আমারা ধৌত বা মাসেহ করিনা।
এবার আসল কথায় আসা যাক, গোসল ফরজ হলে কেবল অযু দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা যায় না। বরং সঠিক নিয়মে গোসল করলে পূনরায় অযুর প্রয়োজন পড়ে না। তাহলে এটা জানা জরুরি যে, গোসলের সুনত তরিকা কি? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কিভাবে গোসল করে তাহারাত অর্জন করতেন? একটা কথা বলে রাখা ভাল, ইস্লামের পুড়ড়ণতা পেয়েছে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর হাত ধরে যার স্বীকৃতি তিনি নিজেই আরাফার ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষনে দিয়েছিলেন। তারপরো যুগের কাল্প্রিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের জীবন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন মাটির ঢিলার পরিবর্তে টিশ্যু ব্যবহার করি। |
প্রিয় পাঠক, যেমনটি আগেই বলেছিলাম। আজকের ব্লগে আমরা জানব ফরজ গোসলের সুন্নত তরিকা কোনটি? দয়াল নবীজি (সাঃ) কিভাবে ফরজ গোসল করতেন? অথবা বর্ত্মান সময়ের সাথে রাসুলের সময়ের জীবন ধারনের কোন পার্থক্য আছে কি না? তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কি কি কারণে গোসল ফরজ হয়?
গোসল ফরজ হয়ার কারণ
আমাদের সমাজে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় অবিবাহিত ছেলে-মেয়েরা বিয়ের আগে ফরজ গোসলের গুরুত্ত্ব দিতে চায় না। বিবাহিত হলে সঠিক সময়ে ফরজ গোসল আদায় না করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই নাপাক অবস্থায় তার স্বাভাবিক কাযকর্ম করে থাকে। এমনকি কেউ কেউ নামাজ পর্যন্ত পড়ে থাকে যেটা ইসলামে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এর জন্য যথেষ্ঠ কারণও রয়েছে যেমন-
এই কথা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে যে ১০/১১ বছরে যখন একজন মানুষ সাবালক হয় সে ছেলে হোক বা মেয়ে হক তখন থেকেই গোসল ফরজ হয়। কিন্তু এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে তিন চার টা বাচ্চা বাবা-মাও জানেন না কিভাবে ফরজ গোসল করতে হয়। তাহলে তারা এতদিন কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করেছেন ? আর কিভাবে নামজ-রোযা করেছেন? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ভাবে গোসল ফরজ হতে পারে-
- ১/ ক. জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলে। উত্তেজনা অনুভব করতে পারুক কি না পারুক। (হেদায়া ১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯)
- ২/ স্ত্রী সহবাস করা। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সামান্য পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে, এক্ষেত্রে বীর্যপাত হয়া শর্ত না। (বুখারি, হা. ২৯১, মুসলিম, হা. ৩৪৩)
- ৩/ নারীদের ঋতুস্রাব বা নেফাস (মাসিক বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) বন্ধ হওয়ার পরেই গোসল ফরজ। (রদ্দুল মুহতার ১/১৬৫)
- প্রতিদিন গোসল করা ফরজ মোস্তাহাব।
- কোন বিশেষ এবাদতের পূর্বে গোসল করা নফল।
- শুক্রবার বা ঈদেরদিন গোসল করা সুন্নত।
- মৃত ব্যাক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য ওয়াজিব
- গোসল ফরজ হলেই গোসল করা ফরজ।
এবার আরেকটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। ফরজ গোসল ও গোসলের ফরজের মধ্যে পার্তক্য কি? খেয়াল রাখা দরকার যেকোন গোসলেই গোসলের ফরজ আদায় করতে হয়, কিন্তু ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে আরো কিছু বিশেষ তরিখা মানতে হয়। নতুবা পবিত্রতা অর্জন হয় না। আর পবিত্রতা ব্যতিরেখে কোন ইবাদত কবুল তো দুরের কথা আদায়ই হয় না। তাহলে এবার জানা দরকার গোসলের ফরজ কি কি?
- ১/গড়গড়াসহ কুলি করা
- ২/ নাকের গভির পর্যন্ত পানি পৌছে নাক পরিস্কার করা।
- ৩/ সমস্ত শরীর একবার ধোয়া ( এমন ভাবে যেন শরীরের কোন অংশ শুষ্ক না থাকে)
বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ | সবার জানা জরুরি
ফাইনালি চলুন জেনে নেই, আল্লাহর হাবীব (সাঃ) কিভাবে ফরজ গোসল করতেন? বিভিন্ন সহীহ হাদিসগ্রন্থ বিশ্লেষণ করে দয়াল নবী (সাঃ) এর গোসলের যে ত্বরিকা পাওয়া যায় তা আপনাদের জন্য নিচে এক এক করে উল্লেখ্য করা হল-
- শুরুতেই নিয়ত করা [সহিহ বোখারী,২৪৮]
- উভয় হাত ক্বব্জিপর্যন্ত ধোয়া [সহিহ বোখারী,২৪৮]
- শরীরে বা কাপড়ে কোন স্থানে ময়লা লেগে থাকলে তা ধুয়ে পরিস্কার করে নেওয়া [সহিহ মুসলিম,৩২১]
- লজ্জাস্থান ধৌত করা অতঃপর উভয় হাত ভালভাবে (সম্ভব হলে মাটিতে ঘষে) ধৌত করা [সহিহ বোখারী,২৪৯]
- নামজের অযুর মত সম্পূর্ণ অযু করা । তবে গোসলের স্থানে (পুকুর বা জলাশয়ে) পানি জমে থাকলে গোসল শেশ করে পা ধৌত করা [সহিহ বোখারী,২৫৭, ২৫৯]
- প্রথমে মাথায় পানি ঢালা [সহিহ বোখারী,২৫৬]
- অতঃপর ডান কাঁধে পানি ঢালা [সহিহ বোখারী,২৫৪]
- তারপর বাম কাঁধে পানি ঢালা [সহিহ বোখারী,২৫৪]
- শেষে অবশিষ্ঠ শরীর ভিজানো [সহিহ বোখারী,২৭৪]
- সমস্ত শরীরে এমনভাবে তিনবার পানি পৌছানো যাতে একটি লোমের গোড়াও শুষ্ক না থাকে। তবে পুকুর বা জলাশয়ের ক্ষেত্রে তিনবার ডুব দেওয়ার দরকার নেই [ আবু দাউদ, ২৪৯]
- সমস্ত শরীর ঘষে মেঝে ধৌত করা [তিরমিযি, ১০৬]
- মহিলাদের শরীরের অলংকার নেড়েচেড়ে তার ছিদ্রে পানি পৌছে দেওয়া।
- গোসলের স্থানে পানি জমে থাকলে সেখান থেকে সরে পা ধৌত করা।
এভাবে গোসলের পর নামাজের জন্য পূণরায় অযু করার প্রয়োজন নেই। যদি না অযু নষ্ঠ হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জানার ও বুঝার তওফিক দান করুন। আমিন।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জেনে উপকৃত হলাম❤️
উত্তরমুছুনThanks
মুছুনJana dorkar
উত্তরমুছুনyea
মুছুন