কোরবানি কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত

কোরবানি করা আল্লাহর জন্য মুসলমানদের  এক বিশেষ ইবাদত। মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য পছন্দের পোষা প্রাণীকে কোরবানী করা। আর কোরান-সুন্নাহ দ্বারা এ কথা স্পষ্টত যে, কোন আমল কবুল বা গৃহীত হয় না; যতক্ষণ না তাতে  ইখলাস তথা খাটি আল্লাহ এর উদ্দেশ্যে না হয়। 

কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত কি আমল কবুল হওয়ার শর্ত ইবাদত কবুলের শর্তাবলী ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন হালাল রিজিকের আয়াত সৎ পথে
কোরবানির প্রস্তুতি 



বাহ্যিকভাবে কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত : 

১/ ঐ রকম পশু দিয়ে কোরবানিকরতে হবে যেটাকে শরীয়ত সায় দিয়েছে। অর্থাৎ কোরবানির জন্তু যেন সেই ধরন বা বয়সের হয় যা শরীয়ত নির্ধারিত করে দিয়েছে। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কুরআনে বলা হয় বাহীমাতুল আনআম। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন   - 

আমি প্রত্যেক সম্প্রদাযের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; এবং তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। [সূরা হজ্জ্ব(২২):৩৪]

রাসুলে আকরাম বয়ান করেন-

তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার। [মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩]।

রাসুল (সাঃ) এর জীবনি বিশ্লেষন করে জানা যায়, আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি ব্যাতীত অন্য পশু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে উম্মতদের নসিহত করে যান নি। তাই কোরবানি কেবল ঐ নির্দিষ্ট পশু দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক (রহঃ.) এর মতে কোরবানির জন্য সর্বো শ্রেষত পশু হলো শিংওয়ালা সাদা-কালো রং এর দুম্বা। কেননা দয়াল নবী রাসূলে কারীম (সা.) এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে সহিহ বুখারি ও মুসলিম হাদিসে জানা যায়। আবার  অধিকাংশ আলেমদের মতানুসারে, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোরবানির পশু হলো উট, তারপর গরু, অতঃপর মেষ (ভেড়া), তারপর ছাগল। (আযওয়াউল বায়ান, ৫/৬৩৪)।

০২/ শরীয়ত অনুযায়ী কোরবানির পশুর বয়সের ব্যাপারটা খেয়াল রাখা জরুরি। যেমনঃ উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ অন্তত দু'বছর না হলে হবে না। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে  একবছর বয়সের হতে হবে। অবশ্য কোন অসুবিধা থাকলে  ছয় মাস বয়সী মেষ কোরবানি করা যায় । ী 

এ ব্যাপারে দয়াল নবী (সা.) বলেন-

দাতালো ছাড়া জবেহ করো না। তবে তা দুর্লভ হলে ছয় মাসের মেষ জবেহ কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩)। 


উক্ববা বিন আমের (রা.) বলেন-

(একদা) নবী (সা.) কোরবানির পশু বিতরণ করলেন। উক্ববার ভাগে পড়ল এক ছমাসের মেষ। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগে ছমাসের মেষ হলো? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, এটা দিয়েই তুমি কোরবানি কর। (সহিহ বুখারি , হাদিস নং ২১৭৮; সহিহ মুসলিম, ১৯৬৫)।

০৩/  কোরবানির পশু সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে  দূরে থাকতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে-

 সাহাবী বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েয হবে না। ১অন্ধ. যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, ২/রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, ৩/ পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং ৪/ আহত; যার কোন অঙ্গ ভেঙে গেছে। নাসাঈর বর্ণনায় আহত শব্দের স্থলে পাগল উল্লেখ আছে। (তিরমিজি-১৫৪৬; নাসাঈ-৪৩৭১; আবূদাউদ; হাদিসটি সহিহ)। 

০৪/ কোরবানির জন্য পশুর উপর মালিকের পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে।  চুরি, আত্মসাৎ, বন্ধকী, কর্জ কিংবা অবৈধ টাকায়  ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রীত পশু দ্বারা যেমন কোরবানি আদায় হবে না। ঠিক একই ভাবে হারাম উপার্জন যেমন সুদ, ঘুষ, প্রবঞ্চনা, ধোঁকা প্রভৃতির অর্থ দ্বারা কেনা পশুর কোরবানি জায়েয নয়। রাসূল (সা.) বলেন- 

আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতিত কিছু গ্রহণ করেন না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০১৫)।

সুতরাং এই চার ধরনের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি কবুল হবে না না। 



কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত কি আমল কবুল হওয়ার শর্ত ইবাদত কবুলের শর্তাবলী ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন হালাল রিজিকের আয়াত সৎ পথে
খাসি কোরবানি্র পূর্বমুহুর্ত 
শরীকদের ব্যাপারে করণীয়

অংশিদারদের সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ , কোনো একজন অংশিদারের আয়ে ভেজাল থাকলে সবার কোরবানি নষ্ঠ হয়ে যাবে।

কখনোই অনুমান করে গোশত বন্টন করা চলবে না; বরং সঠিকভাবে মেপে নিতে হবে। যাতে কারো মনে সন্দেহের সুযোগ না থাকে।

শ্রমিকের প্রাপ্য হক সঠিকভাবে আদায় না করে গোশত দিলে চলবে না। তবে তাঁর মজুরি দেওয়ার পর অতিরিক্ত হিসেবে গোশত দেওয়া যাবে।

কোরবানি যাঁর ওপর ওয়াজিব হয়েছে, তাঁর নিজে দেওয়ার পর অন্যদের পক্ষ থেকে দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু নিজের পক্ষ থেকে না দিয়ে অন্যের পক্ষ থেকে বা মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে  দিলে তা সহিহ হবে না।

বণ্টন করার সময় গোশত তিন ভাগ করে, এক ভাগ নিজের জন্য, অপর দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয়স্বজন এবং অপর ভাগ মিস্কিন্দের  মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। আর এটিই মুস্তাহাব। প্রয়োজনে শর্ত সাপেক্ষে সবটুকুও রেখে দেওয়ার বিধানও রয়েছে।

আরো পড়ুন-

কোরবানির সুন্নত তরিকা | শুরু থেকে শেষ

কোরবানির বিধান | যে ভুলে কোরবানি হবে না

কোরবানির পশুর গোশত ও চামড়ার বিধান

বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ | সবার জানা জরুরি 

কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য করণীয়,  হালাল রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত, কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম ও পবিত্র, কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত, ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত কি, আমল কবুল হওয়ার শর্ত, ইবাদত কবুলের শর্তাবলী, ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন, হালাল রিজিকের আয়াত, সৎ পথে উপার্জন, ইদুল ফিতর, ইদুল আযাহা 

AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

5 মন্তব্যসমূহ

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন