কথায় কথায় ডিভোর্স/তালাক। কিন্তু কেন??? এসো জানি

বিবাহ বিয়ে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় স্বীকৃতি। প্রত্যেক জাতি বা ধর্মেই বিয়ের প্রচলন রয়েছে। বিয়ে ব্যাতীত বৈধ উপায়ে দৈহিক মিলন ও সন্তান জন্মদান করা যায় না। পৃথিবীর আদি থেকে আজ অবধি বিপরীত লিঙ্গের দুটি মানুষের মধ্যে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতঃ সন্তান জন্মদানের একমাত্র বৈধ পন্থা হিসেবে বিয়ের স্বীকৃতি বহাল রয়েছে। 
Talker sunnoti niyom Talaq deoar niom Talaq er mamla Kokhon talaq deoa jabe তালাকের কারন কি তালাক দেওয়ার সুন্নতি নিয়ম তালাকের মাসআলা শরীয়তে তালাকের বি
তালাক একটি অভিশাপের নাম




বিবাহের হুকুম
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন- তোমরা(পুরুষ) নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দমত বিয়ে কর। সূরা- আন নিসা, আয়াত-৪৩.
যেহেতু পবিত্র কোরানে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে তাই এ থেকে বুদ্ধিমানদের অনুধাবন করা উচিত। আবার অপরদিকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র জবান মোবারকেও বিয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রাসুলে করীম (সাঃ) নিজেও একাধিক বিয়ে করেছেন। তাই বিয়ে করা আল্লাহ রাসুলের সুন্নত। দয়াল নবী (সাঃ) সহীহ হাদিসে ফরমান- 

"আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা তিন জনের একটি দল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ’ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা নিজেদের ’ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা কখনই হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কোন্দিন ছেড়ে দিব না। তৃতীয়জন বলল, আমি নারী সঙ্গ ত্যাগ করব, কোনদিন বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, 

’’তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশিঅনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [1] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।"

বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪


বিবাহ বিচ্ছেদের হুকুম

বিবাহ বিচ্ছেদ এর বিধান ইসলামি শরীয়তে যেমন রয়েছে, রয়েছে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যেমন তার পছন্দমত বিয়ে করতে পারে, তেমনি চাইলেই সে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক বা ডিভোর্স দিতে পারে না। এর জন্য ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। যেমন মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইনে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। আবার ইসলামি শরীয়তেও এর সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা আত ত্বালক আয়াত ১ এ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- " তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিবে, তখব তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও। এবং ইদ্দত হিসেব করে রাখ, এবং তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দিও না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোনোরকম অশ্লীল কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। আর এগুলো হচ্ছে আল্লাহ সীমারেখা। অতঃপর যে আল্লাহর সুনির্দারিত সীমারেখা লঙ্গন করবে সে অবশ্যই নিজের উপর জুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এরপর আল্লাহ কোন পথ প্রস্তুত করে দিবেন। (আল কোরআন)

অন্যদিকে সহীহ হাদিসে তালাক সম্পর্কে দয়াল নবি(সাঃ) বলেন- আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল বস্তু হচ্ছে তালাক"।(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস - ২১৭৭)

আবার যদি আইনের কথা বলি তবে বেশ কয়েকটি আইনেই এর ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণা রয়েছে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২১ অনুসারে-- কোন নাগরিক চাইলে যথাযথ কারণ দর্শানোর মাধ্যমে প্রচলিত বিধি-বিধান মেনে একে অপরকে তালাক বা ডিভোর্স দিতে পারে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

বিবাহ বিচ্ছেদের পরিণতি
ধর্মীয় ও সামাজিক উভয়ভাবেই তালাক বা ডিভোর্স এর কুফল লক্ষ করা যায়। যদিও আধুনিক সমাজে ডিভোর্স নিয়ে তেমন হতাশার ছাপ লক্ষ করা যায় না। কিন্তু মানুসিকভাবে তারা যে খুব একটা ভাল থাকে না, জীবন দর্পনে তার প্রতিচ্ছবি সহজেই বোধগম্য। একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের এর চেয়ে নারীকেই অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়। পরিবারের চুপ থাকা, প্রতিবেশীদের সমালোচনা কিংবা সমাজের আড় চোখের শিকার হতে হয়। হয়তোবা তার কোন দোষ ছিল না। কিন্তু সেই কতাটি কি সে মুখ ফোটে ব্যাক্ত করতে পারে? পারলেই বা কতটুকু পারে?? একটা সময় তার কাছে মনে হয়েই পারে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ কোন সমাধান নয় বরং সমস্যার জন্মদাতা। মানুষ চাইলেই সবকিছু তার মতো করে পায় না। জীবন চলার পথে বাধা বিপত্তি আসে আসবে, এগুলো মোকাবিলা করার মধ্যেই জীবনের স্বার্থকথা।  এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে নয়। 

ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য কে দায়ী, পুরুষ নাকি নারী??
কেউ কেউ বলছেন পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মানুসিকতাই এর জন্য দ্বায়ী। আবার কেউ বলছেন নারীর আধুনিক শিক্ষা বা পাশ্চাত্য ধ্যান ধারনাই এর মূল কারণ।  আলেম সমাজ বলছে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই ব্যাপক আকার ধারন করছে ইত্যাদি। আসলে মূল কারন কি?? 
সমাজ বাস্তবতায় আমরা উপরের কোনটিকেই অস্বীকার করতে পারি না। তথাপি আমরা যদি বাস্তবতার নিরীখে বিশ্লেষণ করি তবে এ কথা প্রতীয়মান হতেই পারে যে, উপরে উল্ল্যেখিত কারন গুলো আংশিকভাবেভাবে দ্বায়ী। তার চেয়ে বড় কারণ হচ্ছে উভয়ের মানসিক পরিপক্কতা। কেননা, মানসিক পরিপক্কতা উপরের অযুহাতগুলোকে অনেকটাই নিস্ক্রিয় করে দেয়। তাই এককভাবে কেবল নারী বা পুরুষকে দোষারোপ করা উচিত না। সুষ্ঠু মানসিকতা ও পারস্পরিক বুঝাপড়ার অভাবই বিবাহবিচ্ছেদের শেষ পরিণতি। 

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ
বিবাহ বন্ধন মানেই ধর্মীয়-সামাজিক স্বীকৃতির পাশাপাশি দুটি মানুষের আত্মত্যাগ ও বিশ্বাসের প্রতিজ্ঞা। যখন এই আত্মত্যাগে আর বিশ্বাসে ফাটল ধরে তখনি হয়তো একটা যুগলের মাথায় সেফারেশনের চিন্তা আসে। এছাড়াও কিছু পারিবারিক, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যেগুলো এধরণের অপ্রীতিকর ঘটনাকে উষ্কে দেয়।
  1. পারিবারিক কারণ
যারা বাবা-মা নিয়ে একসাথে যৌথ পরিবারে বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে পরিবার একটা বড় ভুমিকা রাখে। এই সমাজে বউ এর চোখে শাশুড়ী খারাপ হয়। আবার বউ যখন শাশুড়ী হয় তখন বউ খারাপ হয়। এ এক চরম বাস্তবতা। এই গেল ঘরের খবর। আবার ছেলে এবং বউ দুইজনেই যদি জব হোল্ডার হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কেউ কাউকে সময় দিতে পারে না। আর যদি একজনও হয় তাও অলস সময় যায় না।

      ২.সামাজিক কারন
সমাজে হরহামেশা ঘটেই চলেছে ডিভোর্স এর মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোন ঘটনা যখন সমাজে সংঘটিত হয়, সমাজ এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেটা ভাল কিংবা মন্দ যাইহোক না কেন। তারপর এক সময় সেটা কালচারে পরিণত হয়। বিবাহ বিচ্ছেদ ও এর ব্যাতিক্রম নয়।

        ৩. রাষ্ট্রীয় কারণ
রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আইন করা হয়। এবং সেই আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্র জনগনকে সহায়তা করে। নারীর ক্ষমতায়ন ও বৈশ্বিকিকরনের নামে নারীদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিবিন্ন আইন হচ্ছে। দেশে দেশে এসব আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে। কখনো ধর্মের বিধানক এ তোয়াক্কা না করেই হচ্ছে এসব আইন। কখনো দেওয়া হচ্ছে ধর্মের অপব্যাখ্যা। আর এর সুযোগে আধুনিক শিক্ষিত সমাজ তালাকের মতো অপসংস্কৃতিতে ধাবিত হচ্ছে

         ৪.পরকিয়া
পরকিয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনভাবেই এর কোন ভিত্তি নেই। বিকৃত রুচিবোধ ও নৈতিক অবক্ষয় এর প্রধান কারন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি সমাজে পরকিয়ার প্রচার চালান। আস্তে আস্তে আরো প্রখর হতে থাকে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। বর্তমানে পেপার-পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল খুললেই দেখা যায় এমন গর্হিত খবরের অভাব নেই। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম একটি কারণ।

বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে বেচে থাকার উপায়
বিবাহবিচ্ছেদ যেহেতু জীবনের কোন সমাধান নয়, তাই এ থেকে বেচে থাকাই শ্রেয়। এর জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক বুঝাপড়া। দাম্পত্য জীবনে ভুল বুঝাবুঝি হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। তবে এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, প্রব্লেম যেখানে আছে এর সলিউশনও আছে। জাস্ট মন খোলে কাউন্সিলিং করতে পারলে এমন অনেক সমস্যাই সমাধান করা যায়। এজন্য সমস্যাকে এড়িয়ে নয় বরং মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষভাবে  ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নৈতিক শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে মূল্যবোধ জাগ্রত করলে এরকম সমস্যা থেকে বেচে থাকা সম্ভব বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে একান্ত অপারগ হলে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে রাষ্ট্রীয় নিয়ম কানুনের মাধ্যমে ডিভোর্স দিতে পারা আপনার অধিকার। আপনি চাইলে সেই অধিকার ভোগ করতেই পারেন। 

আরো পড়ুন-


বিবাহের হুকুম মোবাইলে বিবাহের হুকুম ফোনে বিবাহের হুকুম মোবাইলে বিবাহের হুকুম কি বিবাহের খুতবার হুকুম বিবাহের খুতবা বিবাহের শুভেচছা বার্তা বিবাহের খুতবা আরবি বিবাহের সংজ্ঞা বিবাহের খুতবা বাংলা উচ্চারণ বিবাহের বায়োডাটা বিয়ের গান বিয়ে বাড়ির গল্প বিয়ে করতে গিয়ে নাটক বিয়ের কার্ড বিয়ের মেহেদি ডিজাইন বিয়ের শাড়ি বিয়ের সাজ বিবাহ বার্ষিকী bibaho barshiki bibaho er khutba তালাক দেওয়ার নিয়ম তালাক নামা তালাকনামার ফরম তালাকের মাসআলা তালাকনামা খালি ফরম pdf তালাকের নিয়ম তালাক সম্পর্কে ফতোয়া তালাকনামা লেখার নিয়ম তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে তালাকের কতদিন পর বিয়ে করা যায় তালাক আইন ২০১৯ খোলা তালাক তালাক কখন কার্যকর হয় একতরফা তালাক তালাকের প্রকারভেদ বায়েন তালাক কি কি কি কারনে তালাক হয় তালাক দিতে কত টাকা লাগে মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম talak nama talaker bidhan talaker niyom talaker masala talak hadis talaker niyom in islam talak nama bangla তালাকের নোটিশ 
AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন