যে সামান্য ভুলে যাকাত আদায় হয় না এসো জানি

যাকাত এর বিধান কি?

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো যাকাত। মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে ৮২ বার যেমন নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছে। নামাজের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যাকাতের কথাও এসেছে ৮২ বার। সরাসরি জাকাত’ শব্দ দ্বারা ৩০ বার, ‘ইনফাক’ শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং ‘সদাকাত’ শব্দ দ্বারা ৯ বার এই নির্দেশনা রয়েছে। মোট ১৯ টি সুরায় এ ব্যাপারে বিশদ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- 

(১) সুরা বাকারা।

২) সুরা নিসা।

(৩) সুরা মায়িদা।

(৪) সুরা তওবা।

(৫) সুরা আরাফ।

(৬) সুরা কাহাফ।

(৭) সুরা মারইয়াম।

(৮) সুরা মুমিনুন।

esojani.com যে সামান্য ভুলে নষ্ট হতে পারে আপনার যাকাত zakat er hisab বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় namaj roja hazz jak
যাকাত হস্তান্তর



যাকাত আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ইরশাদ ফরমান- "তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত দাও"।

যাকাত হচ্ছে ধনিদের সম্পদে গরিবের (শতকরা আড়াই টাকা) হক। কেবল নিসাব পরিমান সম্পদ বা তার বেশি সম্পদের মালিকগণ যাকাত প্রদান করবেন। তবে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে কেউ যদি সঠিক হিসাব ও মাত্রায় যাকাত আদায় না করেন তবে তার যাকাত আদায় হবে না এবং সমুদয় সম্পদ তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। 

যাকাত কাদের উপর ফরজ?

প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক যেকোন ব্যাক্তির মালিকানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের পরিমান যদি নিসাব পরিমান হয় এবং সেই সম্পদ বা সম মূল্যের সম্পদ এক চন্দ্রবছর থাকে তবে তার উপর ২.৫% বা শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত প্রদান করা ফরজ।

নিসাব কি

সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সমমূল্যের সম্পদ। [বি.দ্র. পূর্বে সাড়ে সাত ভরি সোনা ও সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার দাম সমান ছিল]

কিন্তু বর্তমানে সোনা রুপার দামে ব্যাপক তারতম্য হওয়ায় ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কিংবা উলামা মাশায়েকগণ যে নিসাব নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী যাকাত প্রদান কাম্য।

বছর নির্ধারণ 

যেদিন অর্থসম্পদ নিসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে ঐ দিন থেকেই জাকাত বর্ষ গণনা শুরু হবে।  যেহেতু চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয় এবং সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ সময়সীমা ১০ বা ১১ দিন কম। এই অবস্থায় কেউ যদি সৌরবর্ষ হিসাবে জাকাত প্রদান করতে চায় তবে তাকে হয় ২.৫৮% অথবা অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে। 

কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হয়

যদি আপনার কাছে নিন্মোক্ত সম্পদের কোন একটি থাকে এবং তা যদি নিসাব তথা যাকাতের শর্তের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

যেমন-

বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা।

ট্রাভেলার্স চেক।

ব্যাংক চেক।

ব্যাংক ড্রাফট।

পে-অর্ডার।

পোস্টাল অর্ডার।

মানি অর্ডার।

শেয়ার সার্টিফিকেট।

কোম্পানি শেয়ার।

ডিও লেটার।

সঞ্চয়পত্র।

সিকিউরিটি মানি।

জামানত।

প্রাইজবন্ড।

ট্রেজারি বন্ড।

এবং

বিমা বা ব্যাংকে রাখা।

আমানত।

চলতি হিসাব।

সঞ্চয়ী হিসাব।

মেয়াদি সঞ্চয়।

কিস্তিতে জমা।

এফডিআর।

ফিক্সড ডিপোজিট।

পোস্টাল সঞ্চয়ী।

বিশেষ সঞ্চয়।

পেনশন স্কিম ও অফিশিয়াল প্রভিডেন্ট ফান্ড।

স্বেচ্ছা প্রভিডেন্ট ফান্ড।

ডিভিডেন্ড (জাকাত হিসাব তারিখে এসব নগদায়ন করলে যা পাওয়া যাবে)।

ফেরত পাওয়ার যোগ্য প্রদত্ত ঋণ।

ব্যবসার পণ্য ও মূল্যবান শোপিস বা মূল্যবান।

পাথর হীরা–জহরত।

মণি–মাণিক্যমু ক্তা ইত্যাদি (এসবের বর্তমান বাজারমূল্য) সম্পদের আওতায় পড়বে।

ব্যবসায়িক নার্সারি।

হর্টিকালচার।

বীজ উৎপাদন খামার।

কৃষি খামার।

বনজ বৃক্ষ খামার।

ফলদ বৃক্ষ খামার।

ঔষধি গাছের খামার।

চা–বাগান।

রাবার বাগান।

তুলাবাগান।

রেশম বাগান।

আগরগাছের বাগান।

অর্কিড নার্সারি ও ফুল বাগান।

মুরগির খামার।

মাছের খামার ইত্যাদি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামগ্রী। এসবের বর্তমান বাজারে বিক্রয়মূল্য হিসাবে ধরতে হবে।

তবে- স্থাবর সম্পদ জায়গা-জমি এবং বাড়ি ও গাড়ি যা বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়নি তা জাকাত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

কিন্তু, যদি গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি  বিক্রির জন্য রাখা হয়, তবে সেগুলোর বর্তমান বিক্রয়মূল্য (বাজারদর) হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে।

যাকাতের অর্থ কাদের দেওয়া যাবে?

পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষনা করেন যে সুনির্ধারিত নিন্মোক্ত ৮ শ্রেণ্রির মানুষকে যাকাত প্রদান করা যাবে।এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।

(১) ফকির।

(২) মিসকিন।

(৩) জাকাতকর্মী।

(৫) কৃতদাস।

(৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।

(৭) আল্লাহর পথে জিহাদ ও 

(৮) বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য। ’ (সুরা তওবা)।

যারা অগ্রাধিকার পাবেন

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ফরমান হয়েছে যে, যকাত প্রাদানের ক্ষেত্রে 

"এমন অভাবী লোক যারা আল্লাহর পথে নিজেদের নিয়োজিত রাখার কারণে (উপার্জনের জন্য) দুনিয়া চষে বেড়াতে পারে না। সম্ভ্রান্ততার কারণে অনভিজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। আপনি তাদের চিহ্ন দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা করে না। আর তোমরা যেকোনো উত্তম জিনিস ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ
তায়ালা সে বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৩)।

উপরিউক্ত আটটি খাতের মধ্যে যুগ-চাহিদা ও গুণাগুণ বিবেচনায় রেখে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে

কোন কোন জিনিস দিয়ে যাকাত প্রদান করা যাবে

একটা কথা মনে রাখতে হবে যাকাতের জন্য নির্ধারিত সম্পদের মালিক কোনভাবেই আপনি না। তাই আলগা মাতুব্বরি করা আপনার জন্য সমুচিত হবে না। যে সম্পদের যাকাত দিবেন সম্ভব হলে ঐ সম্পদ দিয়েই যাকাত দেওয়া। কিন্তু এটা বেশ জটিল। তার সমমূল্য হিসেব করে টাকায় যাকাত দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞগণ। তবে খেয়াল রাখবেন লুঙ্গি-গামছা দিয়ে যাকাত দিবেন না। যেহেতু এই টাকার মালিক বা হকদার আপনি না তাই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যারা হকদার তাদের সুবিধা-অসুবিধাকে সর্বোচ্চ গুতুত্ত্ব দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের বোঝার তওফিক দান করুন। আমিন।।

কেন রমজানেই যাকাত দিবেন

মনে রাখতে হবে, যাকাতের হিসাব চন্দ্রবর্ষ ধরে হিসেব করতে হয়। আবার আমরা সৌরবর্ষে অভ্যস্ত। নরমালি আমরা চন্দ্রমাস বা বছরের হিসাব তেমন একটা রাখি না রমযান মাস ব্যাতিত। তাই রমযান মাসে যাকাতের হিসাব রাখা সহজ। ঝামেলা কম। অপরদিকে আমরা জানি রমযান মাসের ফজিলত অনেক অনেক গুন বেশি। এই মাসে যেকোন ভালো কাজের বিনিময় সাত থেকে সত্তরগুণ বেশি এবং যাকাত প্রদান করা ফরজ। তাই রমযান মাসই যাকাত প্রদানের মুখ্যম সময়। তবে কেউ চাইলে অন্য যেকোন সময় যাকাত প্রদান করতে পারেন যদি হিসেবে কোন জটিলতা না থাকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং হারাম থেকে বেচে থাকার তওফিক দিন।। আমিন।।

‌‌‌<><><><><<><><><><><>

AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

1 মন্তব্যসমূহ

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন