জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিসন্তান জন্মদান একটি স্বাস্থ্য ও জৈবিক প্রক্রিয়া। দুইজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ তথা স্বামী স্ত্রীর যৌন মিলনে নতুন শিশুর জন্ম হওয়াকে সন্তান জন্মদান বলে। সন্তান জন্মদানের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। আঠার শতকের শেষার্ধে ইউরোপের ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এর আন্দোলন শুরু হয়। বর্তমানে তা সারাবিশ্বে ব্যাপক আকার ধারন করেছে।
|
জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে | এসো জানি |
পুরুষের স্পাম বা শুক্রাণু বা বীর্যের সাথে স্ত্রীর ডিম্বাণু বা ওভাম বিক্রিয়া করে একটি ভ্রুণ তৈরি হয় যা থেকে একটা মানুষের সম্পূর্ণ অবয়ব বা আকার ধারন করে।
তো যদি কোন কারণে শুক্রাণু-ডিম্বানুর মিলন ব্যাহত হয় তাহলে সন্তান জন্ম নেয় না। এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ দুই উপায়ে হতে পারে।
১/ প্রাকৃতিকভাবে
প্রাকৃতিকভাবে যদি কারো স্পার্ম বা অভাম প্রোডাকশন স্বাভাবিক না থাকে কিংবা পর্যাপ্ত পরিমাণে না হয় তাহলে জায়গোট প্রকৃয়া সম্পন্ন হয় না এবং সন্তান জন্ম হয় না। আবার কোন কোন সময় স্বামী স্ত্রীর যৌন রোগ বা যৌন বাহিত রোগের কারণেও সন্তান উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে।
২/ কৃত্রিমভাবে
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান ও গবেষণার ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ-এর কৃত্রিম পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই পদ্ধতি ৩ রকমের হতে পারে। যথাঃ
১/ স্বল্পমেয়াদী বা সাময়িক পদ্ধতি
২/ দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি
৩/ স্থায়ী পদ্ধতি।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ কেন করা হয়
জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর সম্ভাব্য দুটি কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।
১/ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে
ধর্ম মতে কেবল তখনি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যখন-
- এই ভয় হয় যে, যেকোন কারণে সন্তান ধারন করতে গেলে অনাগত সন্তান কিংবা তার মায়ের বড় ধরনের ঝুঁকি বা মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।
- অথবা আগের সন্তান মায়ের দুধ পানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে।
- কোন দ্বীনদার ডাক্তার যদি সবদিক বিবেচনা করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর পরামর্শ দেন অথবা
- কোন বৈধ কারণে স্ত্রী সন্তান লালন পালনে অক্ষম হলে ইত্যাদি।
২/ পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে
আর পার্থিব কারণ গুলো আমাদের সবার জানা। বলা হয়ে থাকে অধিক জনসংখ্যা নানাবিধ সমস্যার কারন। সুখী সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে হলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর কোন বিকল্প নেই। পরবর্তী প্রজন্মকে অর্থনৈতিক সাবলম্বী করার জন্য, উন্নত শিক্ষা দীক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করতে পরিবারে সদস্য সংখ্যা কম রাখতে বলা হয়। যদিও এটি ধর্মীয় ভাবে একটি বিতর্কিত বিষয়।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর সনাতন পদ্ধতি
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পন্থা বা চেষ্টা হাজার বছরের পুরনো। হাদিসের কিতাবেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু তখন আধুনিক ব্যাবস্থাপত্র ছিল না। তাহলে প্রশ্ন হলো, তখন কিভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হত। এর উত্তর হলো তখন এখনকার মত এত জনপ্রিয় ছিল না জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা। তারপরও ক্ষেত্র বিশেষে তখন কিছু কিছু মানুষ আজল করত। আজল হচ্ছে বাহিরে বীর্যপাত করার পদ্ধতি।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর আধুনিক পদ্ধতি
কনডম বা খাওয়ার পিল সে তো অনেক আগে থেকেই ছিল। যুগ যুগ ধরে মানুষ এসব প্রাক্টিসের সাথে পরিচিত। এগুলো অস্থায়ী ভিত্তিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর সহায়ক ফর্মুলা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও গবেষণার ফলে মানুষ আরও যুগান্তকারী আবিস্কারের দিকে ঝুকছে। মানুষ এখন স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থার উন্নয়ন করেছে। যেটিকে বলা হয় টিউবেক্ট্যামি বা ভ্যাসেক্ট্যামির । এটি নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়। নারীদের ওভারী বা ডিম্বাশয় কেটে ফেলা হয়। ফলে ঐ নারীর পক্ষে আর সন্তান ধারন করা সম্ভব হয় না। অপরদিকে পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপাদনের নালী কেটে ফেলা হয়। যার ফলে সেই পুরুষের মিলনে আর সন্তান জন্ম হয় না। যদিও পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপারগুলোকে বেশ ইতিবাচক ভাবেই নেওয়া হয়। কিন্তু ইসলামি ভাবধারার দেশগুলোতে এ নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক। কেননা স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থি।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি
পবিত্র কোরআনে সূরা নাহলের ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্ব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন-
"আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন। আল কোরআন।
এ প্রসঙ্গে সূরা আনয়াম এর ১৫১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমি তোমাদের এবং তাদের রিজিক দিয়ে থাকি। আল কোরআন।,
পবিত্র কোনআন মাজিদের অন্য আরেক জায়গায় মহান আল্লাহ রাব্ব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন-
‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। (মনে রেখো) তাদের এবং তোমাদের আমিই রিজিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩১)।
অপরদিকে দয়াল নবী (সাঃ) সর্বদাই সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তাই যে ব্যাপারে কোরআন হাদিসে অকাট্য বয়ান ও দিক নির্দেশনা রয়েছে সে ব্যাপারে ফের মন্তব্য করা ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
কোরান
হাদিস অনুসারে কখন জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েজ
কখন জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হারাম
ইসলামি শরিয়তের বিধান মতে শর্তহীনভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হারাম। এ ব্যাপারে কোন এখতেলাফ নেই। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। তবে অবশ্যই তা যথাযথ শর্ত মেনে। শর্তগুলো উপরের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অংশে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই মনে রাখতে হবে, স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর কোন সুযোগ ইসলামি শরিয়তে নেই। তা সম্পূর্ণ হারাম।
প্রচলিত পন্থায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর কুফল কি কি
জন্ম নিয়ন্ত্রণ আপনি যেভাবেই করেন না কেন তার কিছু সুনির্দিষ্ট কুফল রয়েছে। অর্থাৎ এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার রয়েছে যেগুলো ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। যেমনঃ
১/ ব্যাভিচার বা যিনার প্রসার
২/ বিভিন্ন জটিল রোগের সম্ভাবনা।
৩/ জন্মের হার হ্রাস
৪/ সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়
৫/ অর্থনৈতিক অপচয় ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য মোবারাকবাদ। আশা করি লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে। আর যদি নূন্যতম উপকার হয়ে থাকে তবে আমাদের পরিশ্রম সার্থক। দয়া করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিবেন। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর পিল, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর ইঞ্জেকশন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইঞ্জেকশন এর দাম বাংলাদেশ, ইমপ্লান জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, ইমপ্ল্যান্ট জন্ম নিয়ন্ত্রণ খরচ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ জেল, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর প্রাকৃতিক উপায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলের দাম, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ভাল কোনটা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইঞ্জেকশন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ইসলামের বিধান, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি হারাম, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর আধুনিক পদ্ধতি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কনডম, ভাল মানের কনডম